Govt New Rules: রান্নার গ্যাস থেকে পেট্রোল-ডিজেল দাম বাড়তে চলেছে! ভারতীয় মুদ্রার রেকর্ড পতন।

Govt New Rules: হঠাৎ করেই ৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ব অর্থনীতির চলচ্চিত্র পুরো দমে বদলে গেল। ফের আরেকবার রেকর্ড পতন হতে চলেছে ভারতীয় মুদ্রার। ডলারের তুলনায় ভারতীয় রুপির মূল্য রেকর্ড ব্রেক করে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গিয়েছে।
বুধবার প্রতি ডলারে ৯০ টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল ভারতীয় টাকা। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ৯০.১৩ এর নীচে নেমে যাওয়ার অর্থ হল এখন থেকে এক ডলার কিনতে ৯০ টাকা ১৩ পয়সা খরচ করতে হবে। বৃহস্পতিবার যা ৯০ টাকা ৪৩ পয়সায় চলে আসে।
ভারতীয় মুদ্রার পতনের ফলে বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞ ও বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনকারীদের মত অনুযায়ী, শেয়ার বাজারের পতন এবং ভারত মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এই অস্থিরতা টাকার দামের উপর আরও চাপ বাড়াতে চলেছে ভবিষ্যতে। এর ফলে কি প্রভাব পড়তে চলেছে দেশীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের পকেটে জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণ নাগরিকদের পকেটে চাপ পড়বে যার প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন জীবনে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গ্যাজেট কেনা থেকে শুরু করে ঋণ পরিশোধ, চিকিৎসার খরচ, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ সব দিকেই অনেকটাই প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
রুপির দাম কেন পড়ল ?
রুপির এই পতনের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি ঘিরে অনিশ্চয়তা। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রুপির উপর।
২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যা মুদ্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
জিনিসপত্র ব্যয়বহুল হবে কি?
রুপির পতন আমদানি করা দ্রব্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেনের জন্য ডলার ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ হলো অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা দ্রব্যের মূল্য ডলারে পরিশোধ করতে হবে। যখন ভারতীয় রুপির মূল্য হ্রাস পাবে, প্রতি ডলারের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে। কোন দ্রব্য বেশি দামে কেনা হলে সেটা আরো বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। তখন সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ পড়বে।
সব থেকে কোন কোন দ্রব্যে বেশি প্রভাব পড়বে:-
১) অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে:- ভারত অপরিশোধিত তেলের ৮৫% এরও বেশি বিদেশ থেকে কিনে থাকে। এই ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হয় ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও। যেখানে ৬০% এরও বেশি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে ভারত। ভারতীয় রুপির দাম হ্রাস পাওয়ায় ভারতীয় সরকারকে আমদানি করা দ্রব্য আরো বেশি দাম দিতে হবে। এর ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকটা বেশি হবে। রান্নার তেল, এলপিজি গ্যাস এবং পেট্রোলের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকটা আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাবে।
২) বিদেশে পড়াশোনার খরচ বাড়বে:-
রুপির দাম কমে যাওয়ার ফলে বিদেশে পড়াশোনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। আগে পর্যন্ত প্রতি ডলারে ৮০ টাকা হারে, ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার ডলারের বার্ষিক টিউশন ফি ছিল ৪০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এখন থেকে এই অংক দিয়ে দাঁড়াবে ৪৫ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ সরাসরি ৫ লক্ষ টাকা বেড়ে যাবে। এর ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারে খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে।
৩) বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ওপর প্রভাব:-
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বিলাসবহুল গাড়ি এ সমস্ত যন্ত্রাংশ আমদানি করতে অনেকটা ব্যয়বহুল হবে। বিভিন্ন দরকারি সামগ্রী যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টিভি, রেফ্রিজারেটর, এসি, এমনকি ছোট গ্যাজেট থেকে শুরু করে, বেশিরভাগ পণ্যই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে এই সমস্ত জিনিসের যন্তাংশ আমদানি করার জিনিসের উপর নির্ভর করে। এই যন্ত্রাংশের দাম ডলারে পরিশোধ করা হয়। এদিকে রুপির মূল্য পতনের কারণে কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে আরও দাম বাড়িয়ে দেবে বিভিন্ন পণ্যের। এর ফলে জীবন ও নিত্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জিনিস সবকিছুরই দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে সাধারণ মানুষদের পকেটে।
৪) সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে:-
ডলারের তুলনায় রুপির দামের পতনের কারণে মুদ্রাস্ফীতি জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে অনেকটাই বেশি খরচ হয়ে যাবে এর ফলে সঞ্চয়কৃত অর্থ অনেকটাই কম হবে। এর জন্য বিনিয়োগের সুযোগ কমবে কারণ স্থায়ী আয়ের উপর প্রভাব পড়লে বিনিয়োগের দিকে মানুষের ঝোঁক অনেকটাই কমে যাবে।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে ভারতীয় রুপির মান কমে যাওয়ায় শুধুমাত্র দেশীয় অর্থনীতি নয়, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের পকেটেও অনেকটাই চাপ বৃদ্ধি পাবে।

